সময় এবং তারিখ

ঢাকা,বাংলাদেশ 

Welcome To My Websites

শবে বরাতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা।  সকল বিব্রান্তির নিরসন

শবে বরাতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা। 
সকল বিব্রান্তির নিরসন।





শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাতকে হাদীস শরীফে “লাইলাইতুন নিসফি মিন শা‘বান” নামে উল্লেখ করা হয়েছে। আর উক্ত রাতের ফজীলতের দিকে খেয়াল করে উলামায়ে উম্মত এ রাতকে “লাইলাতুল বরাত” নামকরণ করেছেন। এর অর্থ--লাইলাতুল বারাআতি মিনাজ জুনূব অর্থাৎ গুনাহ থেকে মুক্তির রাত। যেমনিভাবে “তারাবীহ নামায” নামের কোন উল্লেখ হাদীস শরীফে নেই, হাদীস শরীফে উক্ত নামাযকে “কিয়ামুল লাইল ফী রামাজান” বলা হয়েছে এবং উক্ত নামায সকল মুসলমানের জন্য পালনীয়, তেমনিভাবে শবে বরাত নাম উল্লেখ না থাকলেও লাইলাতুন নিসফি মিন শা‘বান নামে উক্ত রাতের ফজীলত ও আমলের কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হওয়ায় তা মুসলমানদের জন্য পালনীয় হবে।

লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের ফজীলত ও আমলের বিষয় সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তেমনি এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল হাদীসের সমষ্টি এ রাতের বিশেষ ফজীলতের বিষয়কে প্রমাণিত করে। তাই একে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।

শবে বরাত সম্পর্কে নিম্নে সহীহ হাদীস উল্লেখ করা হলো-

ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ رضي الله عنه ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ صلي الله عليه وسلم ﻗﺎﻝ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ

হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শা‘বানের রাতে (শা‘বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত শবে বরাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।”

(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৬৫/ সুনানে বাইহাকী--শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৮৩৩/ মু‘জামে তাবরানী, কাবীর, হাদীস নং ৩৫৪৩)

উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান (রহ.) তার ‘কিতাবুস সহীহ’ গ্রন্থে (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামে প্রসিদ্ধ এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাদীসটির সনদ সহীহ বলেই তিনি একে তাঁর কিতাবুস সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ বা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার। তাই ইমাম মুনযিরী, আল্লামা ইবনে রজব, আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে গ্রহণীয় ও আমলযোগ্য বলেছেন।
(বিস্তারিত দেখুন : আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ২য় খণ্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা/ মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ, ৮ম খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা/ শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা, ১০ম খণ্ড, ৫৬১ পৃষ্ঠা)

আহলে হাদীস সম্প্রদায় এ হাদীসকে কীভাবে অস্বীকার করবেন--যেখানে স্বয়ং তাদের মুকতাদা শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এ হাদীসকে সহীহ বলে গণ্য করে তার “সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা” গ্রন্থের ৩য় খণ্ড-১৩৫ পৃষ্ঠায় এ হাদীসকে স্থান দিয়েছেন এবং এর সমর্থনে আরো ৮টি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন--

ﻭﺟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺑﻤﺠﻤﻮﻉ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﺻﺤﻴﺢ ﺑﻼﺭﻳﺐ ﻭﺍﻟﺼﺤﺔ ﺗﺜﺒﺖ ﺑﺄﻗﻞ ﻣﻨﻬﺎ ﻋﺪﺩﺍ ﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﺳﺎﻟﻤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻀﻌﻒ ﺍﻟﺸﺪﻳﺪ ﻛﻤﺎﻫﻮ ﺍﻟﺸﺄﻥ ﻓﻰ ﻫﺬﺍﺍﻟﺤﺪﻳﺚ

“সারকথা হলো, এ হাদীসটি এ সকল রিওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে নিঃসন্দেহে সহীহ। আর কোন হাদীস সহীহ হওয়া তো এর চেয়ে কমসংখ্যক রিওয়ায়াতের সমষ্টিতেই হয়ে যায় যখন তা প্রচণ্ড দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকে--যেমন অবস্থা এ হাদীসের ক্ষেত্রে।”(সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৮ পৃষ্ঠা)

অধিকন্তু আলবানী সাহেব সেখানে ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করে শক্ত প্রতিবাদ করেছেন, যারা কোন ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বারাআতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।
(সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)

বলা বাহুল্য, শবে বরাতের ব্যাপারে যদি শুধু এ হাদীসটিই থাকতো এবং অন্য কোন হাদীস না থাকতো, তবুও এ হাদীস দ্বারাই শবে বারাআত প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কারণ, এটা নির্ভরযোগ্য সহীহ হাদীস। তারপরও আমরা দেখতে পাই, এ রাতের ফজীলত সম্পর্কে আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্য থেকে আলবানী সাহেব ৮টি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো জয়ীফ হলেও প্রচণ্ড ধরনের জয়ীফ নয়। তাই এগুলোর সপক্ষে উল্লিখিত হাদীস বিদ্যমান থাকায় এগুলো প্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।

উল্লিখিত সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বরাতের ফজীলত ও আমল উভয়ই প্রমাণিত হয়। কেননা, যখন এ হাদীসে শবে বরাতে বান্দাদেরকে ক্ষমা করার ঘোষণা দেয়া হলো, সুতরাং সেই ক্ষমা লাভের জন্য অবশ্যই তাদের এর উপযুক্ত আমল করা কর্তব্য। তথাপি এ রাতের আমল সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা সম্বলিত নির্ভরযোগ্য হাদীসও রয়েছে। যেমন, এ সম্পর্কে একটি নির্ভরযোগ্য হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো--

عن عائشة بنت أبي بكر قالت قام رسول الله صلي الله عليه وسلم من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيت ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت فلما رفع إلي رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال يا عائشة أظننت أن النبي قد خاس بك؟ قلت لا والله يا رسول الله ولكنني ظننت أنك قبضت لطول سجودك فقال أتدرين أي ليلة هذه؟ قلت الله ورسوله أعلم قال هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم

হযরত আয়িশা বিনতে আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)নামাযে দাঁড়ালেন। তখন তিনি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা করলাম--তাঁর প্রাণবিয়োগ হয়েছে। যখন আমি তা ভাবলাম, তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাতে তা নড়ে ওঠলো। তখন আমি ফিরে এলাম। এরপর যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম--না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনার প্রাণবিয়োগ হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান--এটা কোন্ রাত? আমি বললাম--আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন-- “এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত শবে বারাআত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শাবানের রাতে স্বীয় বান্দাদের প্রতি নিবেশন করেন। অতঃপর তিনি ক্ষমা প্রার্থনা কারীদেরকে ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদেরকে অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণ কারীদেরকে তাদের বদকর্মের কারণে ফিরিয়ে দেন।”

(বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮২ পৃষ্ঠা)

এ হাদীসটিও নির্ভরযোগ্য। ইমাম বাইহাকী (রহ.) এ হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেন-- ﻫﺬﺍ ﻣﺮﺳﻞ ﺟﻴﺪ “এই হাদীসটি উত্তম সনদের মুরসাল হাদীস।”(বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা)

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো, শবে বারাআতে নফল নামায পড়া এবং তাকে এভাবে দীর্ঘ করা, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে--এটা মাসনূন আমল। আবার সুনানে ইবনে মাজাহর এক হাদীসে রাতে নফল নামায পড়া ও নফল ইবাদত করার সাথে পরদিন রোযা রাখার নির্দেশনাও বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো--

عن علي بن أبي طالب ﺭﺿﻰ الله ﻋﻨﻪ قال قال رسول الله ذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا، فيقول ألا من مستغفر فأغفر له، ألا مسترزق فأرزقه، ألا مبتلى فأعافيه، ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر

হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--“মধ্য-শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। কেউ আছে কি আপদগ্রস্ত? তাকে আমি নিষ্কৃতি দান করব।আছে কি এমুক, আছে কি ওমুক--এভাবে আল্লাহ তা‘আলা আহবান সুবহে সাদিক পর্যন্ত ।”

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪)

এ হাদীসটি জয়ীফ। তবে এর সমর্থনে উপরে বর্ণিত সহীহ হাদীস থাকায় এটা গ্রহণযোগ্য। তা ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যহ রাতে প্রথম আসমানে এসে বান্দাদেরকে ঐরূপে আহবান করার ব্যাপারে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে--যা এ হাদীসের বর্ণনাকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়াও শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং ১লা শা‘বান থেকে ২৭ শা‘বান পযন্ত সবগুলো দিনই রোযা রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ফজীলতময়। শুধু কেবল রামাজানের ২/১ দিন আগে রোযা রেখে রামাজানকে এগিয়ে না এনে শেষবিরতি দিয়ে রামাজানের রোযা সুন্দরভাবে রাখার জন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। তবে যাদের প্রতিমাসে এদিন রোযা রাখার অভ্যাস তাদের কথা ভিন্ন। অপরদিকে আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ফিকহের অনেক কিতাবে এদিনসমূহের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন বলা হয়েছে। এ হিসেবে যাদের ইচ্ছা হয়, শবে বারাআতের দু’দিন আগের থেকে রোযা রেখে শবে বরাতের রোযা সহকারে মোট তিনদিন রোযা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে এটাই উত্তম।

সুতরাং শবে বরাতের বিশেষ আমল হিসেবে এ রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগী করা তথা নফল নামায পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাসবীহ-তাহলীল পড়া, দরূদ শরীফ পড়া ও ইস্তিগফার করা প্রভৃতি আমল মুস্তাহাব। আর পরদিন অথবা আগের দুইদিন সহ মোট তিনদিন  রোযা রাখা এর সংশ্লিষ্ট উত্তম আমল।

এ রাতে নফল নামায যার যতটুকু ইচ্ছা আদায় করতে পারে। এজন্য কোন সীমা নির্ধারিত নেই। শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে এ দু’রাতের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায নেই। সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করবে এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে। তদ্রূপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার, দুআ-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করবে। তবে নফল নামায দীর্ঘ করা এবং সিজদায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা উচিত, যা কোনো কোনো হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়। বিভিন্ন বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। বলাবাহুল্য যে, যে কোনো বই-পুস্তিকায় কোনো কিছু লিখিত থাকলেই তা বিশ্বাস করা উচিত নয়। বিজ্ঞ আলিমদের নিকট থেকে জেনে আমল করা উচিত। শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী করণীয়। ফরয নামায তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও১ নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না।-ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯ তবে কোনো আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায় তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না। তেমনি এ রাতের গোসলেরও কোন হুকুম নেই বা এমন কোন ফজীলত নেই যে, যত পানির ফোটা পড়বে, ততগুনাহ মাফ হবে। এ সবই গর্হিত বানোয়াট কথা। তেমনি এ রাত উদযাপনে বাড়াবাড়ি করা, হালুয়া-রুটি বিতরণ, মোমবাতি জ্বালানোর রুসম পালন ও পটকা ফুটানো গর্হিত কাজ।

এ রাতের নফল আমলসমূহ বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাযতো পুরুষদের অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার, তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়া বাঞ্ছনীয়। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফে নেই। তাই শবে বারাআত উপলক্ষে মসজিদে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন বা সমারোহ বাঞ্ছনীয় নয়। তেমনি দলবদ্ধ হয়ে এ রাতে কবরস্তান যিয়ারতেরও নিয়ম নেই। তবে একাকি কেউ কবর যিয়ারত করতে গেলে যেতে পারে এবং তা শুধু এ রাতের জন্য খাস নয়, যখন খুশী তখনই যেতে পারে। আর রাত জেগে যাতে ফজরের নামায কাজা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং রাতে ইবাদত-বন্দেগী করতে করতে ঘুমের জরুরত অনুভূত হলে, তাও পূরণ করা বাঞ্ছনীয়।

শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদ ও দোকানপাটে আলোকসজ্জা করা হয় হালুয়া-রুটি ও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ইত্যাতি, এগুলো ভুল রেওয়াজ, যা পরিহার করা আবশ্যক। আলোকসজ্জা বা আতশবাজিতে অপচয়ের পাশাপাশি বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণও রয়েছে। তাই তা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। আর হালুয়া-রুটি বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য বানানো,আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বিতরণ করা তদ্রূপ খিচুড়ি রান্না করা এবং গরীব-মিসকীনদের মাঝে বন্টন করা সাধারণ অবস্থায় জায়েয ও ভালো কাজ হলেও এটাকে এ রাতের বিশেষ আমল মনে করা এবং এসবের পিছনে পড়ে এ রাতের মূল কাজ তওবা-ইসে-গফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হওয়া শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। মূল কথা এই যে, এই রাতগুলো উৎসবের রাত নয়, ইবাদত-বন্দেগী ও তওবা- ইসে-গফারের রাত। তাই রসম-রেওয়াজের অনুগামী হয়ে এ রাতে উপরোক্ত কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া নিজেকে ক্ষতিগ্রস- করা ছাড়া আর কিছুই নয়।-ইকতিযাউস সিরাতিল মুস-াকীম ২/৬৩২; আলমাদখাল লি ইবনিল হাজ্ব ১/২৯৯ ও ১/৩০৬, ৩০৭; তানকীহুল হামীদিয়াহ ২/৩৫৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/২৮৯

এভাবে হাদীসে বর্ণিত সহীহ তরীকায় শবে বরাতে আমল করা মুস্তাহাব। এদিকে লক্ষ্য করেই অনেক আইম্মায়ে মুহাদ্দিসীন তাদের কিতাবে শবে বারাআত নিয়ে ভিন্ন বাব কায়েম করেছেন এবং মুহাক্কিক মাশায়িখে উম্মত শবে বারাআত-এর ফজীলত ও আমলের ওপর পৃথকভাবে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাই এ রাতের বিশেষত্ব ও ফজীলতকে অস্বীকার করা হাদীস সম্পর্কে জাহালাতের শামিল।

[হাওয়ালা : ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, ২য় খণ্ড, ৬৩১-৬৪১ পৃষ্ঠা/ মারাকিল ফালাহ, ২১৯ পৃষ্ঠা প্রভৃতি]
Share This