সময় এবং তারিখ

ঢাকা,বাংলাদেশ 

Welcome To My Websites

সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি-(একটি গবেষণামূলক পর্যালোচনা)




মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা(সঃ)-এর সাহাবীগণ তাঁহার কাছ হতে সরাসরি শিক্ষাপ্রাপ্ত মহান এক মানবগোষ্ঠী,যাঁহাদের সম্বন্ধে নবী করীম(সঃ)-এর উক্তি হলঃ ﺍﻛﺮﻣﻮﺍ ﺃﺻﺤﺎﺑﻰ ﻓﺈﻧﻬﻢ ﺧﻴﺎﺭﻛﻢ অর্থাৎ-“তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব”।(মুসনাদে আহমদ) অন্যত্র তিনি সাহাবাদের মর্যাদা সম্মন্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেনঃ “ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻰ ﺃﺻﺤﺎﺑﻰ ﻻ ﺗﺘﺨﺬﻭﻫﻢ ﻏﺮﺿﺎ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﻯ ﻓﻤﻦ ﺃﺣﺒﻬﻢ ﻓﺒﺤﺒﻰ ﺃﺣﺒﻬﻢ ﻭﻣﻦ ﺃﺑﻐﻀﻬﻢ ﻓﺒﺒﻐﻀﻰ ﺃﺑﻐﻀﻬﻢ অর্থাত-“সাবধান ! তোমরা আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আমার প্রতি ভালোবাসা বশেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে”।(তিরমিযী,মুসনাদে আহমদ) তিনি আরো ইরশাদ করেছেনঃ « ﻻَ ﺗَﺴُﺒُّﻮﺍ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻰ ﻓَﻠَﻮْ ﺃَﻥَّ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﺃَﻧْﻔَﻖَ ﻣِﺜْﻞَ ﺃُﺣُﺪٍ ﺫَﻫَﺒًﺎ ﻣَﺎ ﺑَﻠَﻎَ ﻣُﺪَّ ﺃَﺣَﺪِﻫِﻢْ ﻭَﻻَ ﻧَﺼِﻴﻔَﻪُ » . অর্থাত-“তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিওনা। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ উহুদ সমপরিমাণ স্বর্ণও যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে,তবেও তাঁদের এক মুদ্দ বা তার অর্ধেক পরিমাণ(এক মুদ=১ রতল। আল্লামা শামী(রাঃ)বয়ান করেছেন যে, এক মুদ্দ ২৬০ দিরহামের সমপরিমাণ। দ্রষ্টব্যঃ আওযানে শরিয়্যাহ)আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার সমতূল্য হবেনা।(সহি বুখারী-হাদিস নং ৩৭১৭) হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ)হতে বর্ণিতঃ রাসুলুলুল্লাহ(সঃ) ইরশাদ করেছেন- ” ﻣﻦ ﺳﺐ ﺍﺻﺤﺎﺑﻲ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﻟﻌﻨﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﺟﻤﻌﻴﻦ ” .অর্থাৎ -“যারা আমার সাহাবীদেরকে গালী দেয়, তাদের প্রতি আল্লাহর,ফেরেস্তাদের,এবং জগতবাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক।(তাবরানী) উপরোল্লিখিত হাদিস সমুহ দ্বারা এ কথাই প্রমাণ হয় যে, সাহাবারা সত্যের মাপকাঠি। তাঁদের সর্ম্পকে কোন ধরনের সমালোচনা করা যাবেনা। এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের(রাসুলুল্লাহ সঃ কর্তৃক ঘোষিত নাজাত প্রাপ্ত দল) আক্বিদাও এটাই যে ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻛﻠﻬﻢ ﻋﺪﻭﻝ অর্থাৎ -সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর কোরানে তো স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেনঃ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﻭﺭﺿﻮﺍ ﻋﻨﻪ অর্থাৎ -“আল্লাহপাক তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট ও রাজী হয়ে গেছেন এবং তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং রাজী হয়ে গেছেন।(সুরা বায়্যিনাহ-পারা-৩০) সুতারং এ পর্যন্ত প্রাপ্ত দলিলাদি দ্বারা এ কথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সাহাবায়ে কেরামগণ সমস্ত সমালোচনার উর্দ্ধে। তাঁদের ব্যাপারে যারাই বিরুপ মন্তব্য করবে বুঝতে হবে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শত্রু।এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন দলও আছে,যারা মুখে ইসলাম ও ইসলামী বিপ্লবের কথা বলে এবং সাহাবাদের সমালোচনা করতে কিঞ্চিত দ্বিধাবোধ করেনা। তাঁদের লেখনির মাধ্যমে উহা প্রকাশ পায়। আমার প্রশ্ন ঐ সকল প্রীয় পাঠকদের প্রতি যারা আমার এই লেখাটাকে পড়বে যে, “সাহাবাদের সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে এমন কোন ব্যক্তি কি কখনো মুসলমান হতে পারে???? আমার গত ৮ই জুনের লেখার উপর অনেক ভাই কমেন্ট দিয়েছিলেন। কিছু পক্ষে কিছু বিপক্ষে। পরের দিন ৯ই জুন রাইস উদ্দিন ভাই তার পোষ্টে (“সত্যের সন্ধানে-একটি পর্যালোচনা)” আমার লেখাটার পূনঃপ্রকাশ করতঃ এ বিষয়ের উপর তিনি একটি বিশ্লেষণা মূলক পর্যালোচনা করার প্রয়াস করেছেন। আবার ইসলামী কন্ঠ নামে আরেক ভাই এর পরের দিন ১০ই জুন একই বিষয়ের উপর একটি পোষ্ট দেন। যার শিরোনাম ছিল “সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নাকি কোরান সুন্নার সত্যিকারের অনুসারী”?। আমার লেখার উপর প্রাপ্ত কমেন্টগুলির মধ্যে অনেকগুলি প্রশ্ন সহ আমার দেওয়া তথ্যকে খন্ডন করতঃ পাল্টা তথ্য উপাস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার কয়েকটি উত্তর ইতিপূর্বে আমি দিয়েছি। প্রথমতঃ আমি ঐ সকল বিষয় সমুহ নিয়ে আলোচনা করতে চাই যে বিষয়গুলির প্রতি ইতিপূর্বে দৃষ্টি আকর্ষণ করানো হয়েছে। সেগুলির মধ্যে যেমন, (১)সাহাবীর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ কি? (২) ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻛﻠﻬﻢ ﻋﺪﻭﻝ (আস-সাহাবাতু কুল্লুহুম উদূল)এর দ্বারা কি সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি বুঝায় নাকি উলুমে হাদিসের পরিভাষায় কেবলমাত্র হাদিস বর্ণনা কারীর গ্রহণযোগ্যতাকে বুঝায়? (৩)সমস্ত সাহাবারাই যদি সত্যের মাপকাঠি হত তাহলে রাসুলুল্লাহ(সঃ) সমস্ত সাহাবাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র ‘আশারায়ে মুবাশশারাকেই’ কেন জান্নাতের সু-সংবাদ দান করলেন? (৪) হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান(রাঃ) খলিফা হিসাবে কি রাশিদ(সঠিক পথপ্রাপ্ত) ছিলেন? (৫) সাহাবায়ে কেরাম যে,সত্যের মাপকাঠি এটা কি কোরান হাদিস দ্বারা প্রমাণিত? (৬) সাহাবায়ে কেরাম সম্বন্ধে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদা কি? (৭) এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কারা? (৭) সাহাবিরা সত্যের মাপকাঠি হলে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ-যুদ্ধ সহ পরর্বতিতে হযরত আবু বকর(রাঃ) এর যামানায় কেন বিদ্রোহ দেখা দিল? (৮)চার খলিফার জামানাকে খোলাফায়ে রাশেদা বলাহয় অথচ তার পরেও সাহাবায়ে কেরামের খেলাফত ছিল কিন্তু খোলাফায়ে রাশেদার অন্তর্ভূক্ত না করার কারন কি? (৯)রাসূল (সঃ) এর সাথে যারা ওহুদের যুদ্ধে রওয়ানা হয়েছিলেন তারা সকলেই সাহাবা ছিলেন কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর নেতৃত্বে যারা ফিরে গেল তারা কারা? (১০)তাবুকের যুদ্ধে বিভিন্ন কারনে যারা অংশ গ্রহন করেননি তাঁদের তিনজনের তওবা আল্লাহ মাফ করেদিয়েছেন কিন্তু বাকীদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি তাদের মর্যাদা কি? সুপ্রীয় পাঠকবৃন্দ ! কেউ যদি সত্যকে মানতে চায় তাহলে তাঁর সম্মুখে সত্যকে উপাস্থাপন করা সহজ হয়ে যায়। আর যদি সে বলে “ বিচার তো আমি মানব তবে, তালগাছটা আমার”। তাহলেতো আর বিচার করার প্রশ্নই আসেনা। সুতারং যারা নিরপেক্ষ থেকে সত্যকে উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা করবে তারা নিশ্চয় সত্যের সন্ধান পাবে। আসুন তাহলে এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। প্রথমতঃ সাহাবী কারা? উত্তরঃ সাহাবী আরবী শব্দ ‘সুহবাতুন’ ধাতু হতে নির্গত যার অর্থ সাহচর্য হওয়া ,সংস্পর্শে থাকা, সঙ্গ দেওয়া।(আল-ক্বামুসুল ওয়াহীদ, আল-মুফরাদাত,আল-ক্বামুসুল মুহীত,লিসানুল আরব) শরীয়তের পরিভাষায় সাহাবী ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি রাসুলের(সঃ)হাতে ইসলাম গ্রহন করে ঈমান এনেছেন এবং ঈমানী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছেন। এবং রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর সাথে তাঁদের সঙ্গ স্বল্প সময়ের জন্য হোক বা দীর্ঘ সময়ের জন্য হোক। তাঁরা রাসুলুল্লাহ(সঃ) হতে হাদিস বর্ণনা করুক বা নাই করুক। তাঁরা রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর সঙ্গে জিহাদে অংশ গ্রহণ করুক বা নাই করুক(নুঝহাতুন নযর, আল-ইসাবাহ ফী তাম’ঈজিস সাহাবা, আল-ইসতীয়াব ফী মা’রিফাতিল আসহাব, আক্বিদাতুত তাহাবী)। তাহলে এখানে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সাহাবা হওয়ার গৌরব মাত্র তাঁদেরই যারা রাসুলুল্লাহ(সঃ)এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঈমানের উপর বহাল ছিল। আর যারা ইসলাম গ্রহণের পর পুনরায় মুরতাদ বা ইসলাম থেকে সরে গেছে শরীয়াতের দৃষ্টিতে তাঁদেরকে সাহাবা বলা যাবেনা। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে জাহস(যে উম্মে হাবিবার স্ত্রী ছিল এবং তাঁরা উভয়ে একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছিল পরবর্তিতে হাবশা হিজরত করার পর খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। এবং ঐ অবস্থাতেই মৃত্যু বরণ করে। এবং রাবিয়াহ ইবনে উমাইয়্যাহ ইবনে খলফ)। ২নং প্রশ্নের উত্তরঃ আদালাহ ২ প্রকারঃ (১) আদালাতুন রিওয়ায়াহ (২) আদালাতুন মুতলাক্বাহ। “আদালাতুন রিওয়ায়াহ” = হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে তাঁরা সবাই উদুল অর্থাৎ তাঁরা যদি রাসুলুল্লাহ (সঃ) থেকে,বা অন্য কোন সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করে সেক্ষেত্রে তাঁরা নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য। “ আদালাতুন মুতলাক্বাহ”= দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহপাক ও তাঁর প্রীয় রাসুলুল্লাহ(সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে উম্মতের জন্য ﻣﻌﻴﺎﺭ ﺣﻖ সত্যের মাপকাঠী বানিয়েছেন। যাহা কোরান-হাদিস,ইজমায়ে উম্মাহ,আক্বিদায়ে আসহাবে মাযাহিবিল ফিক্বহিয়্যাহ দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহপাক কোরানের মধ্যে অসংখ্য আয়াত সমুহে সাহাবায়ে কেরামের কুরবানী-ত্যাগের বিনিময়ে তাঁদের প্রতি রেজামন্দি,জান্নাতের সু-সংবাদ সহ তাঁদের উচ্চ-মর্তবা ও ফজিলতের বর্ণনা তুলে ধরেছেন যাতে কোন মুনাফিক বা সাহাবাদের দুশমনরা তাঁদের নিয়ত বা চরিত্রের উপর আক্রমণ করতে না পারে। উলামায়ে উম্মত অনেক মেহনত ও পরিশ্রম করে এ রকম বিশেষ আয়াত সমুহ যেগুলি শুধুমাত্র সাহাবায়ে কেরামদের ঈমান ও আমল সম্বন্ধে নাজিল করেছেন ২০০ এর মত গণনা করেছেন। তার মধ্য থেকে নির্বাচিত কয়েকটি আয়াত পাঠকের সামনে তুলে ধরা হল। (১)সর্বপ্রথম আয়াত- ﻛﻨﺘﻢ ﺧﻴﺮ ﺃﻣﺔ ﺃﺧﺮﺟﺖ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﺍﻟﺦ অর্থাৎ -“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।(সুরা আলে-ইমরান-১১০) তাফসীরে তাবরীতে আয়াতের ব্যাখায় হযরত ওমরের(রাঃ) একটি উক্তি তুলে ধরেছেন-“ ﻟﻮ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺎﻝ ﺍﻧﺘﻢ ﻓﻜﻨﺎ ﻛﻠﻨﺎ ﻭﻟﻜﻦ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺘﻢ ﻓﻰ ﺧﺎﺻﺔ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ অর্থাৎ “যদি আল্লাহপাক ইচ্ছা করতেন তাহলে কুনতুম না বলে “আনতুম খায়রা উম্মাতিন”বলতে পারতেন এবং সেক্ষেত্রে আমরা সকলেই এ আয়াতের আওতায় চলে আসতাম। কিন্তু! আল্লাহপাক এখানে সাহাবাদের মধ্যে বিশেষ জামায়াতকে সম্বোধণ করেছেন।(তাফসীরে তাবরী ৪র্থ খন্ড,পৃষ্টা নং ৬৩) এ ছাড়া তাফসীরে ইবনে কাসীরে হযরত ইবনে আব্বাসের(রাঃ) এই রিওয়ায়াতটি বর্ণিত আছে, “ ﻛﻨﺘﻢ ﺧﻴﺮ ﺃﻣﺔ ﺃﺧﺮﺟﺖ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻫﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻫﺎﺟﺮﻭﺍ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻣﻜﺔ ﺇﻟﻰ ﻣﺪﻳﻨﺔ অর্থাৎ- “খায়রে উম্মত” দ্বারা ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম যারা মক্কা হতে মদিনাতে হিজরত করেছিলেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা সাহাবায়ে কেরাম।(তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ম খন্ড, পৃষ্টা নং ৫০৯) (২) দ্বীতিয় আয়াতঃ ﻭﻛﺬﺍﻟﻚ ﺟﻌﻠﻨﺎﻛﻢ ﺃﻣﺔ ﻭﺳﻄﺎ ﻟﺘﻜﻮﻧﻮﺍ ﺷﻬﺪﺍﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺷﻬﻴﺪﺍ অর্থাৎ “এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় বানিয়েছি। যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রাসুল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্যে।(সুরা বাক্বারাহ-১৪৩) উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নসফী(রাঃ) ﻭﺳﻄﺎ“ওসাতানের” অর্থ ﺧﻴﺎﺭﺍ ‘পছন্দনীয়’ এবং “উদুল” বা ﻣﻌﻴﺎﺭ ﺣﻖ (সত্যের মাপকাঠি) করেছেন। অর্থাৎ -“আমি তোমাদেরকে উম্মতের জন্য পছন্দনীয় এবং সত্যের মাপকাঠি বানিয়েছি।(মাদারিক ১ম খন্ড,পৃষ্টা নং ৬৪ ইবনে কাসীর-১ম খন্ড,পৃষ্টা ৫১০,২৫০,২৫১)। (৩) তৃতীয় আয়াতঃ ﻭﺍﻟﺴﺎﺑﻘﻮﻥ ﺍﻷﻭﻟﻮﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮﻳﻦ ﻭﺍﻷﻧﺼﺎﺭ ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺗﺒﻌﻮﻫﻢ ﺑﺎﺣﺴﺎﻥ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﻭﺭﺿﻮﺍ ﻋﻨﻪ ﻭﺃﻋﺪﻟﻬﻢ ﺟﻨﺖ ﺗﺠﺮﻯ ﺗﺤﺘﻬﺎ ﺍﻷﻧﻬﺎﺭ ﺧﺎﻟﺪﻳﻦ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﺑﺪﺍ ﺫﺍﻟﻚ ﺍﻟﻔﻮﺯ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ অর্থাৎ “আর যে সব মুহাজির ও আনছার(ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম,যে সব লোক সরল অন্তরে তাঁদের অনুগামী,আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজি হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি রাজি হয়েছেন। আর আল্লাহ পাক তাঁদের জন্যে এমন উদ্যানসমুহ প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে নহরসমুহ প্রবাহিত হইতে থাকবে। সেখানে তাঁরা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান সফলতা।( সুরা তওবা-১০০) অত্র আয়াতে আল্লাহপাক সাহাবায়ে আনছার ও মুহাজিরদের উচ্চ মর্তবা ও ফজিলত বয়ান করার পাশাপাশি তাঁদেরকে মহান আদর্শ বানিয়েছেন ঐ সমস্ত সাহাবিদের জন্য যারা মর্তবার দিক দিয়ে তাঁদের তুলনায় কম এবং উম্মতের মধ্যে যারা নেককার দ্বীনদার শ্রেণী। শা’বী(রাঃ) বলেন যে,মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে অগ্রবর্তী ও প্রথম তাঁরাই যাঁরা হুদায়বিয়ায় বায়আ’তে রিযওয়ানের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কারাসী(রাঃ) বলেন যে,ওমর ইবনুল খাত্তাব(রাঃ) এমন একজন লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন যিনি এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন-“” ﻭﺍﻟﺴﺎﺑﻘﻮﻥ ﺍﻷﻭﻟﻮﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮﻳﻦ ﻭﺍﻷﻧﺼﺎﺭ ﺍﻟﺦ তখন ওমর (রাঃ)তাঁর হাতখানা ধরে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কে তোমাকে এটা এরুপে পাঠ করালেন?” লোকটি উত্তরে বললেনঃ “উবাই ইবনে কা’ব(রাঃ)”। তখন ওমর (রাঃ)বললেন চলো আমরা উবাই ইবনে কা’বের কাছে যাই এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। অতঃপর উবাই ইবনে কা’বের কাছে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি কি এই আয়াতটি এভাবে পড়তে বলেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন ওমর(রাঃ)তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি কি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)কে এভাবেই পড়তে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। ওমর(রাঃ) বললেনঃ “তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,আমরা এমন এক মর্যাদা লাভ করেছি যা আমাদের পরে কেউ লাভ করতে পারবেনা”।এ কথা শুনে উবাই ইবনে কা’ব(রাঃ) বলেন যে,এই আয়াতের সত্যতা প্রমাণকারী সুরায়ে জুমাআ’র প্রথম দিকের আয়াতটিও বটে। তা হচ্ছে-ﻭﺃﺧﺮﻳﻦ ﻣﻨﻬﻢ ﻟﻤﻞ ﻳﻠﺤﻘﻮﺍ ﺑﻬﻢ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺍﻟﺤﻜﻴﻢ অর্থাৎ “আর(উপস্থিতরা ব্যতিত)অন্যান্ন লোকদের জন্যেও, যারা তাদের সাথে শামিল হবে,কিন্তু এখনও শামিল হয়নি,আর তিনি মহাপরাক্রান্ত,প্রজ্ঞাময়। (৪) সুরায়ে হাশরেও রয়েছেঃ “ ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﺟﺎﺀﺅﺍ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﻫﻢ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﻏﻔﺮﻟﻨﺎ ﻭﻹﺧﻮﺍﻧﻨﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺳﺒﻘﻮﻥ ﺑﺎﻹﻳﻤﺎﻥ ﻭﻻ ﺗﺠﻌﻞ ﻓﻰ ﻗﻠﻮﺑﻨﺎ ﻏﻼ ﻟﻠﺬﻳﻦ ﺁﻣﻨﻮﺍ ﺭﺑﻨﺎ ﺇﻧﻚ ﺭﺅﻑ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ অর্থাৎ “আর (তাদের জন্যেও)যারা(ইসলাম ধর্মে)তাদের(আনছার ও মুহাজিরদের)পরে এসেছে,যারা প্রার্থনা করে “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ক্ষমা করুন,আর আমাদের ঐ ভাইদেরকেও যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং ঈমানদারদের প্রতি আমাদের অন্তরে যেন ঈর্ষা না হয়। হে আমাদের প্রভু! আপনি বড় স্নেহশীল,করুণাময়। (৫)সুরায়ে আনফালেও রয়েছেঃ “ ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﺁﻣﻨﻮﺍ ﻣﻦ ﺑﻌﺪ ﻭﻫﺎﺟﺮﻭﺍ ﻭﺟﺎﻫﺪﻭﺍ ﻣﻌﻜﻢ ﻓﺄﻟﺌﻚ ﻣﻨﻜﻢ অর্থাৎ “আর যারা(নবী সাঃ এর হিজরতের)পরবর্তীকালে ঈমান এনেছে,হিজরত করেছে, এবং তোমাদের সাথে একত্রে জিহাদ করেছে,বস্তুতঃ তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত”। ইবনে জারীর(রাঃ) এটা রিওয়ায়াত করেছেন এবং বলেছেন যে,হাসান বসরী(রাঃ) ﺍﻧﺼﺎﺭ ‘আনছার’ শব্দটিকে পেশ দিয়ে পড়তেন এবং ﺍﻟﺴﺎﺑﻘﻮﻥ ﺍﻷﻭﻟﻮﻥ -এর উপর ﻋﻄﻒ করতেন। তখন অর্থ দাঁড়াবেঃ “মুহাজিরদের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম এবং আনছার ও তাদের অনুসারীদের প্রতি আল্লাহপাক সন্তুষ্ট”। (৬) সুরায়ে ফাতাহ-এ আছেঃ “ ﻟﻘﺪ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺇﺫ ﻳﺒﺎﻳﻌﻮﻧﻚ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺸﺠﺮﺓ অর্থাৎ “মুমিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়’আত গ্রহন করলো তখন আল্লাহ্ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন।(সুরা ফাতাহ-১৮) (৭) সুরা বাক্বারা,আয়াত নং ১৩৭-এ আছেঃ ﻓﺈﻥ ﺁﻣﻨﻮﺍ ﺑﻤﺜﻞ ﻣﺎ ﺁﻣﻨﺘﻢ ﺑﻪ ﻓﻘﺪ ﺍﻫﺘﺪﻯﻮﺍ ﻭﺇﻥ ﺗﻮﻟﻮﺍ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﻫﻢ ﻓﻰ ﺷﻘﺎﻕ অর্থঃ “অতএব তারা যদি ঈমান আনে,তোমাদের ঈমান আনার মত,তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়,তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতারং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। আয়াতে “তোমাদের ঈমান আনার মত”এর দ্বারা রাসুলুল্লাহ(সাঃ)এবং সাহাবায়ে কেরামকেই বুঝানো হয়েছে। আয়াতে তাঁদের ঈমানকে আদর্শ ঈমানের ও সত্যের মাপকাঠি সাব্যস্ত করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত ঈমান হচ্ছে সে রকম ঈমান, যা রাসুলুল্লাহ(সাঃ)-এর সাহাবায়ে কেরাম অবলম্বন করেছেন। সে ঈমান ও বিশ্বাস থেকে যদি চুল পরিমাণও ভিন্ন হয়,তাহলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নহে। (৮) অন্যত্র আল্লাহপাক ইরশাদ করেনঃ ﻳﺒﺸﺮﻫﻢ ﺭﺑﻬﻢ ﺑﺮﺣﻤﺔ ﻣﻨﻪ ﻭﺭﺿﻮﺍﻥ ﻭﺟﻨﺖ ﻟﻬﻢ ﻓﻴﻬﺎ ﻧﻌﻴﻢ ﻣﻘﻴﻢ অর্থঃ “তাঁদের প্রভূ তাঁদেরকে নীজ রহমত,সন্তুষ্টি(রেজামন্দি) এবং এমন জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন যার মধ্যে বিরাজ করছে তাঁদের জন্য অফুরন্ত নেয়ামতসমুহ। ★★ হাদিসের বর্ণনায় সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি হওয়া প্রমাণিতঃ ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﺑﺮﺩﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺍﻟﻨﺠﻮﻡ ﺃﻣﻨﺔ ﻟﻠﺴﻤﺎﺀ ﻓﺈﺫﺍ ﺫﻫﺒﺖ ﺍﻟﻨﺠﻮﻡ ﺃﺗﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻣﺎ ﺗﻮﻋﺪ ، ﻭﺃﻧﺎ ﺃﻣﻨﺔ ﻷﺻﺤﺎﺑﻲ ﻓﺈﺫﺍ ﺫﻫﺒﺖ ﺃﺗﻰ ﺃﺻﺤﺎﺑﻲ ﻣﺎ ﻳﻮﻋﺪﻭﻥ ، ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻲ ﺃﻣﻨﺔ ﻷﻣﺘﻲ ﻓﺈﺫﺍ ﺫﻫﺐ ﺃﺻﺤﺎﺑﻲ ﺃﺗﻰ ﺃﻣﺘﻲ ﻣﺎ ﻳﻮﻋﺪﻭﻥ . অর্থঃ হযরত আবু বুরদাহ(রাঃ) হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ(সঃ) ইরশাদ করেছেন যে, নক্ষত্র সমুহ আসমানের জন্য আমানত স্বরুপ। যখন নক্ষত্রগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে,তখন আসমানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেয়ামত চলে আসবে। এবং আমি আমার সাহাবীদের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন আমি ইহকাল ত্যাগ করব তখন তাঁদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁদের(সাহাবাদের) মধ্যে ইজতেহাদি মতানৈক্য দেখা দিবে। এবং আমার সাহাবীরা উম্মতের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন তাঁদের যুগের অবসান ঘটবে তখন আমার উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ফেতনা-ফ্যাসাদের সুত্রপাত ঘটবে।(মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড,পৃষ্টা নং ৩০৮) উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা গেল যে,সাহাবায়ে কেরামের যুগ ছিল স্বর্ণের যুগ। তাঁদের মধ্যে কিছু বিষয়াদি নিয়ে পারস্পরিক মতানৈক্য থাকলেও ইসলামের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের ফেতনা-ফ্যাসাদ মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। রাসুলে কারীম সাঃ- এর রেখে যাওয়া আমানতের(দ্বীন) মধ্যে কিঞ্চিত পরিমাণ খেয়ানত হতে দেননি। এমনকি হযরত আবুবকর(রাঃ) এর খেলাফতের প্রারম্ভিক সময় কিছু মুনাফেক(নামধারী মুসলমান) ও কিছু সংখ্যক নওমুসলিমরা যাকাত দিতে অস্বীকার করার কারনে হযরত আবুবকর সিদ্দিক(রাঃ) বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দিলেনঃ ﺃﻳﻨﻘﺺ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﺃﻧﺎ ﺣﻰ؟ অর্থঃ “আমি জিবিত থাকতে দ্বীনের ক্ষতি হবে তাহা কখনও সহ্য করা হবেনা। কিন্তু ! সাহাবাদের তিরোধানের পরে দ্বীনের মধ্যে ঈমান বিদ্ধেংশী বিভিন্ন মারাত্নক ফেরকা সমুহের আত্নপ্রকাশ ঘটে তারমধ্যে শিয়া, রাফেজী,খারেজী, মুতাজিলা,ক্বাদিয়ানী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। (২) রাসুলে কারীম(সাঃ) সমস্ত উম্মতকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলে গেছেনঃ ﺳﺘﻔﺘﺮﻕ ﺃﻣﺘﻰ ﺛﻼﺛﺎ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻓﺮﻗﺔ ﻛﻠﻬﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺇﻻ ﻭﺍﺣﺪﺓ : ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻣﻦ ﻫﻰ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻗﺎﻝ : ﻣﺎ ﺃ ﻧﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻰ অর্থঃ“ অতিশীঘ্র আমার উম্মত তেহাত্তর(৭৩) ফের্কায় বিভক্ত হয়ে পড়বে। তন্মধ্যে মাত্র একটি দলই মুক্তিপ্রাপ্ত এবং জান্নাতী হবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেনঃ সেই মুক্তিপ্রাপ্ত সৌভাগ্যশালী দলটি কারা এবং এত বড় সৌভাগ্য লাভের ভিত্তি কোন নীতি বা আদর্শের উপর ? উত্তরে নবী(সাঃ) বললেন,যে নীতি,তরীকা ও আদর্শের উপর আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরাম আছেন।(তিরমিজী শরীফ,ইবনে মাজা,মুসনাদে আহমদ,আল-মুসতাদরাক)উক্ত হাদিসের মধ্যে আল্লাহর রাসুল(সাঃ) স্পষ্ট বলেছেন যে,আমি যেমন সত্যের মাপকাঠি,এবং আমার যেমন সমালোচনা করা যাবেনা। এবং বিনা বাক্যে আমার অনুসরণ ও অনুকরণ ব্যতিরেকে যেমন নাজাতের,ঈমানের,এবং মুক্তির অন্য কোন পথ নাই,তদ্রুপ আমার সাহাবাগণও সত্যের মাপকাঠী ও সকল প্রকার সমালোচনার উর্দ্ধে এবং তাঁদের অনুকরণ ও অনুকরণ ব্যতিরেকে উম্মতের নাজাতের বা মুক্তির কোন বিকল্প পথ খোলা নাই। এবং সাহাবাদেরকে মানলে রাসুলকে মানারই শামিল। এবং এ ব্যাপারে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ(সাঃ) উম্মতকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন।(৩) ﻋﻦ ﻋﺒﺪﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ﺧﻴﺮﺍﻟﻨﺎﺱ ﻗﺮﻧﻰ ﺛﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻠﻮﻧﻬﻢ ﺛﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻠﻮﻧﻬﻢ অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ)হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেছেন যে,সর্বোত্তম মানুষ(সাহাবায়ে কেরাম) আমার যুগের। তারপর তাদের পরের যুগের লোকেরা(তাবেয়ী),তারপর তাদের পরের যুগের লোকেরা(তাবে-তাবেয়ী)-বুখারী,মুসলিম।(৪) ﻋﻦ ﺍﻹﺭﺑﺎﺽ ﺑﻦ ﺳﺎﺭﻳﺔ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺑﺴﻨﺘﻰ ﻭﺳﻨﺔ ﺧﻠﻔﺎﺀ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ ﺍﻟﻤﻬﺪﻳﻦ ﺍﻟﺦ অর্থঃ ইরবায ইবনে সারিয়া(রাঃ)হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ(সাঃ)ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা আমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীন(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-এর সুন্নতকে(আদর্শ) শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরবে।(আবু দাউদ,তিরমিযী,ইবনে মাজা,মুসনাদে আহমদ,মুসনাদে বাযযার,ইবনে হিব্বান,মুসতাদরাক লিল-হাকিম,তারীখে দিমাশক লি-ইবনে আসাকির,আল-মু’জামুল কাবীর,আল-আওসাত,আল-কাবীর লিত্তাবরানী)ইমাম নববী(রাঃ) কাছরাতে তুরুকের কারনে হাদিসটিকে মজবুত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছাড়াও মুহাদ্দিসানে কেরামদের নিকট হাদিসটি অনেক প্রসিদ্ধ এবং হাদিসটি হাসানের স্তরের। হাদিসটির দ্বারা প্রমানিত হয় যে,রাসুলের আদর্শ যেমন উম্মতের জন্য গ্রহণযোগ্য,তদ্রুপ সাহাবায়ে কেরামের আদর্শও গ্রহণযোগ্য। সুতারং সাহাবায়ে কেরাম যে,সত্যের মাপকাঠি এর মধ্যে কোন সন্দেহ রইলনা। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের দৃষ্টিতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠিঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ)ঃ- হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)এর সাহাবায়ে কেরাম উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম জামায়াত,সর্বাধিক পবিত্র চরিত্র ও নম্র স্বভাবের অধিকারী, দ্বীনের ভিত্তি মজবুত করার জন্য এবং রাসুলুল্লাহর(সাঃ) সঙ্গী বানানোর জন্য তাঁদেরকে নির্বাচন করেছেন। তাঁদের মর্যাদা উপলব্ধি কর। তাঁদেরকে অনুসরন কর। তাঁদের সীরাত ও চরীত্রকে জীবনের সম্বল বানিয়ে নাও। কারন তাঁরা আল্লাহর কাছ থেকে হিদায়াত প্রাপ্ত।(মিশকাত-২য় খন্ড,পৃঃ ৩২) ইমামকুল শিরোমনি ইমাম আবু হানিফা(রাঃ)ঃ-আমি ইসতেদলালের(দলিল তালাশ করা) ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কোরানকে অনুসরন করি। যদি কোরানে না পাই তাহলে রাসুলের(রাঃ) হাদিসকে অনুসরণ করি। অন্যথায় সাহাবায়ে কেরামের আছারকে(ছাহাবীদের কথা,কাজ ও সমর্থনকে বলা হয়) গ্রহন করি। (তাহযিবুত তাহযীব-১০ খন্ড,পৃঃ-৪৮০) ইমামুল মুহাদ্দিসীন ইমাম বুখারী(রাঃ)ঃ-সাহাবায়ে কেরাম শরীয়াতে মুহাম্মদীর বুনিয়াদ বা মূল-ভিত্তি। ইমাম আবু দাউদ(রাঃ)ঃ-খোলাফায়ে রাশেদীনের(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)জীবন চরিতই প্রকৃত ইসলাম। ইবনে মাজাহ্ ঃ-সাহাবায়ে কেরামের জামায়াতই দ্বীনের মূল ভিত্তি। ইমাম মুহিউদ্দিন আবু জাকারিয়া ইবনে শারফ আন্-নববী(রাঃ)ঃ-সাহাবায়ে কেরামের সত্যবাদিতা ও ন্যায়-পরায়ণতার উপর সমস্ত উম্মতের ঐক্যমত।(শরহে মুসলিম,২য় খন্ড,পৃঃ-২৭২) ইমামুল কালাম ইবনে হুমাম(রাঃ)ঃ-সমস্ত ইমামদের ঐক্যমতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। (তাক্বরীরুল উসুল-২য় খন্ড,পৃঃ-২৬) ইমাম সুবুকি(রাঃ)ঃ-সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। শাহ্ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দেসে দেহলবী(রাঃ)ঃ-সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্টিত।(ইজালাতুল খাফা) ইমাম তাহাবী(রাঃ)ঃ-আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ঐক্যমতে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। তবে আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে,তাঁরা মাসুম(নিস্পাপ)নন,তবে মাহফুজ(সমালোচনার উর্দ্ধে)। তাঁদের দ্বারা ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তাঁরা মুজতাহিদ(দ্বীনের সংস্কারক)ছিলেন। ইজতেহাদি ভুলের কারনে তাঁদের মধ্যে যে (মুশাজারাত)মতানৈক্য দেখছিল এ ব্যাপারে সুকুত(নিরব)থাকাটাকে প্রাধন্যতা দেওয়া হয়েছে। আর ইজতিহাদের ক্ষেত্রে সঠিক হলে দ্বীগুন পুরস্কার পাবেন আর ভুল হলে একগুন। তবে তাঁদের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি আল্লাহপাক মাফ করার ঘোষণা করে দিয়েছেন। (আক্বিদাতুত তাহাবিয়্যাহ) রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর হুশিয়ারীঃ- রাসুলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ-ﺇﺫﺍ ﺫﻛﺮ ﺃﺻﺤﺎﺑﻰ ﻓﺎﻣﺴﻜﻮﺍ অর্থঃ “যখন আমার সাহাবাদের আলোচনা হয় তখন তোমরা তোমাদের জিহ্বার উপর লাগাম দিও।(জামে সগীর,পৃঃ-২৬) কিন্তু ! দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মওদূদী সাহের তাঁহার লিখিত কিতাব “খিলাফত ও মুলুকিয়্যাত” এর মধ্যে সাহাবায়ে কেরামের(রাঃ) দোষ চর্চা করতে গিয়ে একটুও বিচলিত হননি। এবং তিনি সমালোচনার করতে কোন প্রকার কসর অবশিষ্টও রাখেননি। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানতে নারাজ। কারন সাহাবায়ে কেরাম ভুলের উর্দ্ধে নয়। তিনি বলেনঃ রাসুলের(সাঃ) সাহাবাগন সত্যের মাপকাঠি নন। তাঁরা সমালোচনার উর্দ্ধে নন। তাঁদের জেহেনী গোলামী করা যাবেনা। তাঁদের দোষ-চর্চা করা যাবে। তাঁদের ভিতর এতটা বিশ্বস্ততা নাই যে,কোন মানুষ বিনা বাক্যব্যয়ে তাঁদের অনুকরণ-অনুসরণ করতে পারে। (দসতুরে জামায়াতে ইসলামী-পৃঃ ৪) তাই আজ মওদূদী সাহেবের উত্তরসূরীরা তার আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য তার বিতর্কিত তাফহীমূল কোরান সহ অন্যান্ন পুস্তিকাদি তাঁদের পাঠ্যসূচীতে শীর্ষস্থানে রেখেছেন। আশা করি প্রীয় পাঠক ও পাঠিকাবৃন্দ আমার এই পোষ্টটি দ্বারা নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন। আর যারা সাহাবাদেরকে সত্যের মাপকাঠি মানতে নারাজ,তারাতো অবশ্যই আমার লেখাকে মাইনাসের বন্যা দিয়ে ভাসিয়ে দিবে, তবে কাহারো পিলাচ আর মাইনাচের আশায় আমি এই লেখাটি পোষ্ট করিনি,বরং সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে অন্ততঃ এতটুকু লিখে হলেও আল্লাহপাক ও তাঁর প্রীয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর সন্তুষ্টি পাওয়াই আমার মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন(আমীন)

Share This